বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো:
@ সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব আয়
@ হলফ নামার নামে প্রতি বছর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দলিল লেখকরা
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দীর্ঘ ৫৫ বছর থেকে জরার্জীণ অফিস ও স্টোর রুম। টিনের চালে হাজার হাজার ফুটো। সামান্য বৃষ্টি হলেই দৌড়াদৌড়ির উপর থাকতে হয় অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। পলিথিন আর চট দিয়ে ঢেঁকে রাখা হয়েছে মূল্যবান দলিল ও কাগজপত্র। প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করলেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি পীরগাছা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে। অথচ দলিল লেখকরা হলফ নামার নামে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে । বেশ কয়েকবার অন্যত্র স্থানন্তর করার উদ্যাগ নেয়া হলেও দলিল লেখকদের অনীহার কারণে সরানো যাচ্ছে না পীরগাছা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কার্যক্রম। এদিকে পীরগাছা উপজেলা পরিষদের ভিতর এ অফিসের কার্যক্রম চালানোর দাবি জোরালো হলেও নিরব ভূমিকায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে জানা গেছে, মাসিক ৬ হাজার টাকা ভাড়ায় পীরগাছা উপজেলা পাকার মাথা রাজবাড়ি এলাকায় একটি টিনসেড ঘওে ১৯৬৭ সাল থেকে চলছে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কার্যক্রম। এর পাশেই খোলা আরেকটি টিন সেড ঘরে বসেন দলিল লেখকরা। দীর্ঘ ৫৫ বছর থেকে অফিসটিতে কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। হয়নি সংস্কার। ঘরের চালের টিনগুলোতে হাজার হাজার ফুঁটো। অবকাঠামোতে মরিচা ও ঘুণে ধরে জরার্জীণ হয়ে আছে। পলিথিনে ঢেঁকে রাখা হয়েছে মূল্যবান কাগজপত্র, ভলিউম বই ও দলিলগুলো। বৃষ্টির পানি পড়ে অনেক কাগজপত্র নষ্ট হয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বেশ কয়েক বার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস অন্যত্র হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা হলেও দলিল লেখকদের বাঁধা-বিপত্তির কারণে সরানো যাচ্ছে না।
ফলে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন দলিল লেখক সমিতির নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। কথিত ওই সমিতির ১০০ সদস্য প্রতি মাসে হলফ নামার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। দলিল লেখকরা প্রতি দলিলে ৩শ টাকার হলফ ও ৫০ টাকা খরচের বাবদ দিয়ে প্রতি দলিলে জমি দাতা ও গ্রহিতাদের নিকট আদায় করছেন ২ হাজার টাকা। সেই হিসেবে গত ২০২২ সালে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার ৭০টি হলফ নামা বিক্রি করে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে। একটি চিরকুটে লিখে দিয়ে হলফের নামে ২ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করছেন কয়েকজন দলিল লেখক। যা পরবর্তীতে গোটা উপজেলাজুড়ে হইচই ফেলে দেয়। যা এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাড়িয়েছে।
দলিল করতে আসা হয়রত আলী, রফিকুল ইসলাম বলেন, ৩শ টাকার হলফ নামা দিয়ে সমিতির নামে নেয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। কেউ ঠিকমত হিসেব দেয় না। বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে তারা টাকা আদায় করে। অপর ব্যক্তি হামিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম বলেন, বেশ কিছু উপজেলা পরিষদের ভিতরে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কার্যক্রম চালানো হলেও পীরগাছায় ব্যতিক্রম। এখানে উপরের নির্দেশে ব চলে। তাই অফিস সরছে না। আমরা পীরগাছা উপজেলা পরিষদের ভিতর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস হস্তান্তরের জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপাওে পীরগাছা দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, অন্য জায়গায় আরো বেশি নেয়। সেখানে যান। আমরা আমাদের মত অফিস চালাবো।
জানতে চাইলে উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার তিথি রাণী মন্ডল বলেন, অফিসের অবস্থা খুবই নাজুক। পলিথিন দিয়ে ঢেঁকে রাখা হয়েছে মূলবান দলিলপত্র। অফিসের কার্যক্রম আমি অন্যত্র হস্তান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
রংপুর জেলা রেজিষ্ট্রার আব্দুস সালাম প্রমানিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।